বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ,ছবি ও বিস্তারিত
আমাদের সৌরজগতে ৮টি গ্রহ রয়েছে। সূর্য থেকে দূরত্বের ভিত্তিতে এগুলো হলো বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন।
আর আকারের ভিত্তিতে এগুলো যথাক্রমে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন, পৃথিবী, শুক্র, মঙ্গল ও বুধ।
বৃহস্পতি সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ
বৃহস্পতি আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এই গ্রহের বিশালতা সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া যাক।
আমরা যদি বৃহস্পতি বাদে অন্য সব গ্রহের ভর একসাথে করে এরপর এর ভরের সাথে তুলনা করি তাহলেও বৃহস্পতির ভর আড়াই গুণ বেশি হবে।
বৃহস্পতি এতটাই বড় যে এর ভেতরে আমাদের সৌরজগতের অন্য সব গ্রহ রাখা যাবে। প্রায় ১৩০০ পৃথিবীকে এই দানব গ্রহটি ধারণ করতে পারবে।
বৃহস্পতি গ্রহের আরও অনেক বিস্ময়কর তথ্য রয়েছে। যা সম্পর্কে আজ আমরা জানতে পারব।
সূর্য থেকে দূরত্ব বিচারে বৃহস্পতি গ্রহ পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে এবং আকারে ও ওজনের দিক থেকে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ।
নিরক্ষরেখা বরাবর এটার পরিধি ১,৪২,৯৮৪।কিলোমিটার। এটি পৃথিবীর আকাশে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো লাগে।
পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখতে পাওয়া যায় এমন গ্রহগুলো হচ্ছে বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি আর শনি। এর মধ্যে কেবল শুক্র ও উপগ্রহের কথা বিবেচনা করলে চাঁদের উজ্জ্বলতা বৃহস্পতি থেকে বেশি।
অন্যান্য গ্রহের তুলনায় এর আহ্নিক গতি বেশি হওয়ার কারণে এর নিজের অক্ষে ঘুরে আসতে সময় লাগে মাত্র ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট। যেখানে আমাদের পৃথিবীর লাগে ২৪ ঘণ্টা।
সূর্য থেকে বৃহস্পতির দূরত্ব ৭৭.৮ কোটি কিলোমিটার। এত দূরে অবস্থিত হওয়ার কারণে যেখানে পৃথিবীর সূর্যের চারদিকে ঘুরে আসতে সময় লাগে ৩৬৫ দিন সেখানে বৃহস্পতির লাগে ৪৩২৯ দিন যা পৃথিবীর হিসাবে ১১ বছরেরও বেশি।
- আরও পড়ুনঃ মহাবিশ্বের দশটি রহস্য যা বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা
- মহাবিশ্বের বিস্ময়কর ৫টি গ্রহ
- প্যারাসুট কি? কিভাবে প্যারাসুট বানানো হয়?
বৃহস্পতি গ্রহের বায়ুমন্ডল
চারটি গ্রহকে গ্যাসীয় দানব বলা হয়। এগুলো হলো- শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও বৃহস্পতি। গ্যাসীয় দানব হওয়ার কারণে বৃহস্পতির ঘনত্ব মাত্র ১.৩২৬ গ্রাম/সেমি³।
বৃহস্পতি পুরোপুরি মেঘ দিয়ে ঢাকা। মেঘের নিচের স্তরের ঘনত্ব কিছুটা বেশি। বৃহস্পতির বায়ুমন্ডল মেঘের অনেকগুলো স্তর দিয়ে গঠিত।
এর বায়ুমন্ডলে রয়েছে ৮৬% হাইড্রোজেন, ১৩% হিলিয়াম ও বাকী ১% মিথেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইট গ্যাস। এই গ্যাসগুলো মিলিতভাবে বৃহস্পতিকে এত কালারফুল বানিয়েছে যা একটা ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।
চলুন ঝাপ দেওয়া যাক বৃহস্পতি গ্রহের মেঘের স্তরে
বৈজ্ঞানিকভাবে আপনি বৃহস্পতির ধারে কাছেও যেতে পারবেন না। এর তীব্র রেডিয়েশন আপনাকে তিন লক্ষ কিলোমিটার দূর থেকেই মেরে ফেলবে। আর এই গ্রহের গড় তাপমাত্রা অনেক কম (মাইনাস ১৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)
এরপরও চলুন কল্পকাহিনীর মতো করেই একটা রেডিয়েশন প্রুফ, তাপ ও চাপরোধক একটা শক্তিশালী স্পেস স্যুট পরে ঝাপ দেওয়া যাক এই বৃহস্পতির পেটে।
এই গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ থেকে অনেক বেশি। পৃথিবীর গ্রাভিটেশনাল ত্বরণ যেখানে ৯.৮ মি/সে সেখানে বৃহস্পতির ২৪.৭৯মি/সে। অর্থাৎ আপনি বৃহস্পতিতে পৃথিবীর তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ দ্রুত নিচে পড়তে থাকবেন।
প্রথমেই আসবে সাদা অ্যামোনিয়ার মেঘের স্তর। এই স্তরের গন্ধ ঝাঁঝালো প্রস্রাবের মতো। তাপমাত্রা মারাত্বক কম।
এরপর আসবে বাদামি রঙের অ্যামোনিয়াম হাইড্রোসালফাইড আর অ্যামোনিয়াম সালফাইড গ্যাস। এখানে সূর্যের মিটিমিটি আলো পাওয়া যাবে।
২৫০ কিলোমিটার ভিতরে আসলে আপনি পৌছে যাবেন ৪০০-৬০০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত ঘূর্ণিঝড়ের এলাকায়।
১৯৯৫ সালে নাসার পাঠানো গ্যালিলিও প্রোব বৃহস্পতির যে এলাকায় এসে প্রচন্ড তাপ ও চাপে ধ্বংস হয়ে যায় সে এলাকায় পৌঁছাতে হলে আপনাকে আরও ১২০ কিলোমিটার ভিতরে যেতে হবে।
এরপর আরও নামতে থাকলে আপনি এক ঘণ কালো অন্ধকার স্থানে এসে উপস্থিত হবেন যেখানে পানির মেঘ পাবেন এবং এখানে একটু পর পরই বিদ্যুৎ চমকায়।
আরও নিচে আসতে থাকলে তাপমাত্রার সাথে সমান তালে বাড়তে থাকবে চাপ। একপর্যায়ে আপনি আর বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন না।
কেননা ওই স্থান থেকে পাঠানো সকল রেডিয়ো সিগন্যাল উপরের মেঘেরস্তর গুলোতে শোষিত হয়ে যায়। ফলে ওগুলো ভেদ করে আর কোনো সিগন্যাল আপনি বাইরের জগতে পাঠাতে পারবেন না।
পড়তে পড়তে আপনি না তরল না বায়বীয় এমন এক অদ্ভুত ঘণ পদার্থের উপস্থিতি টের পাবেন। এটাকে বলা হয় সুপারক্রিটিক্যাল ফ্লুইড এবং এখন সূর্যের পৃষ্ঠের সমান।
আমরা সবাই জানি হাইড্রোজেন একটি দ্বিপরমাণুক গ্যাস। তবে আপনি পড়তে পড়তে বৃহস্পতির গভীরে এমন এক স্তরে পৌছাবেন যেখানে হাইড্রোজেন প্রচন্ড চাপ ও তাপের কারণে ধাতু হয়ে গেছে।
বৃহস্পতি গ্রহের ম্যাগনেটিক ফিল্ড অর্থাৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র অন্যান্য গ্রহের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এই গ্রহের ম্যাগনেটিক ফিল্ড পৃথিবীর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি শক্তিশালী। বৃহস্পতির অসাধারণ শক্তিশালী এই ম্যাগনেটিজমের উৎস হচ্ছে এই মেটালিক হাইড্রোজেন।
নিচে নামতে নামতে আপনি জুপিটারের কেন্দ্রের খুব কাছে চলে এসেছেন। চাপ ও তাপ উভয়ই বাড়ছে। তাপমাত্রা এখন প্রায় সূর্যের পৃষ্ঠের পাঁচগুণ।
অবশেষে আপনি বৃহস্পতির কেন্দ্রে থাকা সলিড পাথুরে কোর স্পর্শ করতে পারবেন।
বৃহস্পতি গ্রহের গ্রেট রেড স্পট
বৃহস্পতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য হল এই গ্রহের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত গ্রেট রেড স্পট। বিজ্ঞানীরা বলেছেন এটা বিশাল আয়তনের দৈত্যাকার একটা ঝড় যেটা মূলত সপ্তদশ শতাব্দী থেকে একটানা বয়ে চলেছে বলে ধারণা করা হয় অর্থাৎ প্রায় ৩০০ বছর ধরে।
এই ঝড়টা এত বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত যার মধ্যে দুটি বা তিনটি পৃথিবী জায়গা করে নিতে পারবে৷ এটি সৌরজগতের সবচেয়ে বড় এই ঝড়ের গতিবেগ ৪০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ কয়টি?
বৃহস্পতি গ্রহের ৭৯টি উপগ্রহ রয়েছে। যাদের মধ্যে চারটি উপগ্রহ বৃহৎ আকৃতির। এই চারটি কে গ্যালিলিও উপগ্রহ বলা হয়, কারণ 1610 সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও সর্বপ্রথম এই উপগ্রহ ৪টি আবিষ্কার করেন।
এরমধ্যে বৃহস্পতির সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হচ্ছে গ্যানিমিড। এটা সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ। এটার ডায়ামিটার 5268 কিলোমিটার। এটা আমাদের চাঁদের থেকে প্রায় 2 গুন বড়।
এটি বুধ উপগ্রহের থেকেও বড়। যদি এটি বৃহস্পতি কে কেন্দ্র করে না হতো তাহলে এটি সম্ভবত গ্রহের তালিকাতেই পড়ত।
COMMENTS